মিসু স্যূপ ও আমাদের সম্ভবনা !!
মিসো স্যূপ ও আমাদের সম্ভবনা!!
আবহাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছিল যে টোকিওর তাপমাত্রা শূন্যের নীচে নেমে যাবে।কনকনে শীতে বাসা থেকে বেরোলাম প্রবাসে জীবনের প্রথম কাজে যোগ দিতে। জীবনের প্রথম জব তার উপর রেস্ট্রুরেন্টে, তাই উদ্বিগ্ন ছিলাম। ট্রেন থেকে নেমে ২/৩ মিনিট পায়ে হাঁটা পথ অতিক্রম করে রেষ্টুরেন্টে এসে পৌছলাম। আসার পথে ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখলাম নিকটতম খাবারের দোকান কোথায় রয়েছে, কারণ আমার কাজের সময় দুপুর ২ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময় নিশ্চয়ই ক্ষুধা পাবে এবং আমাকে কিছু খেতে হবে।
যখন রেষ্টুরেন্টে এসে পৌছালাম ম্যানেজার ( টেনচু) আমাকে বিনয়ের সাথে ভিতরে নিয়ে গেলেন এবং অন্যান্ন সহকর্মীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সাথে ছোটো একটা ইন্টারভিউ নিতে ভুল করলেন না। জানতে চাইলেন রেষ্টুরেন্টের কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা। যখন আমি তাকে জানালাম যে আজই আমি জীবনের প্রথম কাজে যোগ দিচ্ছি। এটা জেনে সে বিরক্ত হলেন কি-না তা বুঝলামনা।
একজন এসে আমার কাপড়ের সাইজ জেনে নিয়ে সেই অনুপাতে আমাকে আপাদমস্তক সাদা রঙের কাজের পোশাক ও নীল রঙের টাই হাতে ধরিয়ে দিয়ে কাপড় বদলের ঘর দেখিয়ে দিলেন। কাপড় বদল করে আসার পর ম্যানেজার আমাকে বললেন তুমি ১৫ দিন শিক্ষানবিশ হিসেবে কিচেনে কাজ করবে এবং নিয়মকানুন সম্পর্কে অবহিত করলেন !
যথারীতি কাজে যোগ দিলাম। সবাই আমাকে আগ্রহের সাথেই সহযোগীতা করছে দেখে দ্রুতই আমার জড়তা কেটে গেলো! দেখতে দেখতেই বিকেল ৫ টা হয়ে গেলো! বিকেল ৫ টায় ছিল ' টি টাইম'। সবাই এই সময়ে নাস্তা সেরে নিচ্ছে, ঐ সময় আমি বাহিরে যাচ্ছিলাম নাস্তা আনতে। আমাকে বেরোতে দেখে নাকাহারা নামের এক মেয়ে এসে বললো বাহিরে অনেক তুষারপাত হচ্ছে, তুমি বাহিরে যেয়োনা বরং তোমাকে আমি তোমার জন্য নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি।
যেই কথা সেই কাজ। নাকাহারা মুহুর্তের মধ্যে আমার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে সামনে হাজির এবং জানতে চাইলো এগুলো খেতে আমি পছন্দ করবো কিনা!
আমার চোখে জিজ্ঞাসা দেখে সে নিজেই আমাকে জানালো এটার ভাত ও মাছের মিশ্রণ দিয়ে বানিয়ে তার উপর সমুদ্রের শৈবাল দিয়ে প্রস্তুত করা পেপার দিয়ে মোরানো এটাকে 'অনিগিরি বলে, আর এই যে স্যুপ দেখছো এটাকে মিসো স্যুপ বলে। এটা শ্যামন (সলমন) মাছের মাথা দিয়ে তৈরি করা আর সবুজ রঙের এগুলো হলো সামুদ্রিক শৈবাল যেটা ইংরেজিতে 'সি উইড' বলে। সে মুচকি হেসে বললো ' আমার বিশ্বাস এটা খেতে তোমার ভালো লাগবে ' এবং আমার হাতে তুলে দিয়ে সে নিজের আসনে ফিরে গেলো।
আমি খেলাম এবং সত্যি সেই মিসু স্যুপ ও অনিগিরি আমার খুব ভালো লেগেছিলো, যা আমার স্মৃতিতে এখনো জেগে আছে! সেই থেকে ' সি উইড' এর প্রতি আমার আগ্রহ, যখনই সুযোগ হয়েছে সামুদ্রিক খাবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে খেয়েছি এবং এখনো খাচ্ছি।
কিন্তু যে কথাতা বলার জন্য এতো ইতিহাস টেনে আনলাম তাহলো, আমাদের সমুদ্রসীমায় প্রচুর শৈবাল হচ্ছে এবং মানে অনেক উন্নত । গবেষকদের মতে আমাদের সমুদ্রসিমানায় ২২০ রকম সি উইড পাওয়া যায় যার মধ্যে ১৭০ টি প্রজাতি খাওয়ার উপযুক্ত ! পৃথিবীর মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ সি উইড যোগান দিচ্ছে জাপান, চীন, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড! অথচ আমাদের সি উইড সম্ভাবনা লুটে নিচ্ছে মায়ানমার। যখনই ফিলিপাইনের বাজারগুলোতে যাই তখন সি উইডের ব্যাপক চাহিদা দেখে মনটা সত্যি খারাপ হয়। এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক!!
Comments
Post a Comment